Полная версия
সময়ের অন্তর
কিওকোর কথায় তয়া তার একটা ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকাল। সে বুঝতে চেষ্টা করছিল কিউ তাকে ঠিক কী বলেছে যার জন্য কিওকো এখানে থাকার ব্যাপারে এতটা দৃঢ়তার সঙ্গে মাথা নাড়ল। এখন কিওকোকে আগের থেকে অনেকটাই আলাদা লাগছিল, তাকে বেশ আনন্দিত দেখাচ্ছিল। কিউ সাধারণত যখনই কারো সাথে একান্তে কথা বলে... তাদেরকে পরের কয়েক ঘণ্টা বেশি অপ্রস্তুত অবস্থায় চলাফেরা করতে দেখা যায়। লোকটার মধ্যে তাকেও থতমত খাইয়ে দেবার ক্ষমতা রয়েছে।
কিওকো সুকির হাতটা ধরল এবং সিঁড়ির দিকে হেঁটে যেতে শুরু করল, “আমরা যদি আজ রাতে ডান্স করতে যাই, তাহলে আমি যাতে ঠিকঠাক পোশাক পরে যেতে পারি তার জন্য তোমায় আমাকে সাহায্য করতে হবে।” মেয়ে দুটি নিজেদের মধ্যে কথা বলতে-বলতে হেঁটে বেরিয়ে গেল। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল তারা যেন একে-অপরের চিরকালের চেনা।
শিনবে, কামুই আর তয়া পিছনে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে তাদের সিঁড়ি দিয়ে উঠে অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখল। শিনবে একটু চিন্তিত স্বরে তয়াকে জিজ্ঞাসা করল, "এখানে আসলে কী চলছে তা কি ও সত্যিই জানে?"
তয়া কিওকোর মিলিয়ে যাওয়া শরীরটার দিকে দেখতে-দেখতে বলল, “হ্যাঁ, আমার তো তাই মনে হয়।” তারপর সে ওদের দিকে ফিরে তাকিয়ে বিষয় পরিবর্তন করে বলল, "কামুই, আজ রাতে কি তুমি আমার সাথে যাবে?"
শিনবে একটু উসখুস করল। "তয়া? তুমি কি সত্যিই ডান্সে যাবে?" সে যেন কিছুটা হতচিকত হয়েছিল। সে মনে মনে ভাবল, 'ওকে তো তয়ার মতো লাগছে না।'
"দেখো, আমাকে বলা হয়েছে ওর উপর শকুনের দৃষ্টিতে নজর রাখতে, তাই আমার তো কোন উপয়াই নেই, তাই না?" তয়া কিছুটা বিরক্তির সুরে কথাগুলো এমনভাবে বলল যেন সে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই ডান্সে যাবে। কিন্তু আসলে সে কিওকোকে তার চোখের আড়াল করতে চাইছিল না।
তার নাড়ির স্পন্দন দপদপ করে যেন তাকে বলছিল যে কোন মূল্যেই ওকে রক্ষা করতে হবে, কেউ তাকে তা বলল কি না বলল তাতে কিছু এসে যায় না। আর এই মুহূর্তে সে তার মনঃশ্চক্ষে একটা ডান্সিং ফ্লোরে কিওকোকে তার নাড়ির স্পন্দনের তালে-তালে তার চারিপাশে নৃত্যরত অবস্থায় দেখতে পাচ্ছিল। তার রক্ষকের প্রবৃত্তি হঠাৎ করেই তীব্র আকার ধারণ করেছিল।
তয়া গলা দিয়ে এক মুহূর্তের জন্য একটা হালকা গর্জন বেরিয়ে এসেছিল এবং সে তার দিকে তাকিয়ে থাকা একাধিক চোখের যে ছবি তার মনের মধ্যে ফুটে উঠছিল সেগুলোকে দূর করার জন্য তার মাথা ঝাঁকাল... যে চোখগুলো শুভ নয়।
“হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগছে। কিন্তু আমিও যাচ্ছি,” কামুই একটু চিবিয়ে-চিবিয়ে বলল। “সপ্তাহের শেষের দিনগুলোতে অনন্ত আমাদের অন্যরকম কিছু করা দরকার যাতে এখানের একঘেয়ে রুটিনের থেকে আমরা একটু বাইরে বেরোতে পারি।” কিওকো যে এবার থেকে তাদের আশে-পাশে থাকতে চলেছে তা জানতে পারায় তার চোখে-মুখে একটা স্বস্তির ছাপ দেখা যাচ্ছিল। “সেই সঙ্গে তয়ার জন্য আমাদের একটা গার্লফ্রেন্ড খুঁজতেও তো হবে,” এটাও সে কিছুটা চিবিয়ে-চিবিয়েই বলল।
“আমার গার্লফ্রেন্ড চাই তোমায় কে বলল গবেট,” কামুইয়ের দিকে কটমট তাকিয়ে তয়া কথাগুলো বলল। “গার্লফ্রেন্ড ল্যাং মারলে তখন বুঝতে পারবে গার্লফ্রেন্ড কাকে বলে।”
শিনবে মুচকি হেসে বলল, “আমার মনে হয় এখানে একমাত্র আমিই সেই ব্যক্তি যে জানে গার্লফ্রেন্ড কাকে বলে, আর তোমরা দুই গার্লফ্রেন্ড-হীন যদি তা জানতে চাও আমি তোমাদের তা দেখাতেও পারি।” এই কথা শুনে দু’জনেই যখন ওর দিকে ফিরল এবং খুনীর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাল ও তখন দু’পা পিছিয়ে গেল।
শিনবে দ্রুত বিষয়টা বদলে অন্য কিছু বলবার জন্য তয়ার দিকে এগিয়ে গেল। "কিউ তোমাকে কিওকোর উপর নজর রেখে চলতে বলেছে,?" এই বলে সে কিওকোর চলে যাওয়া পথটার দিকে চোখের ইশারা করল। “বুঝলে... সম্প্রতি আমি এই জায়গাটায় কিছুটা ভারসাম্য বদলের অনুভূতি পেয়েছি, যেন কোন কিছু ঘটার প্রস্তুতি চলছে। অশুভ শক্তি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। এর সঙ্গে কিওকোর কোন যোগ আছে কিনা তা জানার ইচ্ছা রয়েছে।” শিনবের কিছু কিছু প্রবৃত্তি সবসময়েই ঠিকঠাক কাজ করে আর সেই জন্যই সে চিন্তিত ছিল।
তয়ারও সেরকমই কিছু মনে হচ্ছিল, আর তাই সে-ও এর উত্তর চাইছিল। “দেখো, এর থেকে ভাল সময় আর পাওয়া যাবে না। আমি কি উপরে গিয়ে ওকে সরাসরি ওর থেকে সত্যিটা জানতে চাইব?" ওর মনে হচ্ছিল কিওকো কিছু একটা লুকোচ্ছে, আর তয়া চাইছিল সেটা উদঘাটন করতে।
শিনবে তাকে আটকাবার আগেই তয়া দ্রুত পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল। শিনবে একটু আশংকিত হয়ে বলল, “ওরা দু’জন মুখোমুখি হওয়াটা বেশ ঝামেলার। আমি আগেও দেখেছি, তখনও ভাল অশান্তি হয়েছে। ওরা দুই ভাইয়ের মতো বা ওইরকম একটা আচরণ করে।” শিনবের নীলার মতো চোখ দুটো সিঁড়ির দিকেই তাকিয়েছিল, আর তয়াকে দুটো করে সিঁড়ি চড়তে-চড়তে উপরে উঠে যেতে দেখছিল।
একমাত্র কিউই যে তাকে মাঝে-মাঝে ঠাণ্ডা করতে পারে এই কথা ভেবে কামুই মাথা নাড়ল। “ও না গেলে আমি আছি। আজ রাতে তোমার সাথে দেখা হবে,” এই বলে সে সেখান থেকে চলে গেল, আর শিনবে সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সিঁড়িটার দিকেই তাকিয়ে রইল।
শিনবের মনে গভীরে, যেখানে তার রক্ষকের শক্তির প্রতিফলন তারই হৃদয়ের মধ্যে ঘটছিল, নতুন এই ঋত্বিকা সম্পর্কে তার খুবই পরিচিত কিছু অনুভূতি আসা-যাওয়া করছিল। সে তার চোখ দুটো বন্ধ করে নিজের মনের গভীর হাঁতড়ে সত্যের সন্ধান চালাচ্ছিল।
তার নীলার মতো চোখ দুটো আবার সে যখন মেলল, তখন সে দুটো চকচক করে উঠল সেই রহস্য উদ্ঘাটন করতে পেরে যা শুধু তারই জানার কথা।
*****
কিউ কিওকোকে কীভাবে সামলাবে সেই চিন্তায় মগ্ন ছিল, কারণ সে শেষ অবধি কিওকোকে যেখানে আনতে চেয়েছিল সেখানে নিয়ে আসতে সফল হয়েছিল। সহসা দরজায় জোরে-জোরে আঘাতের শব্দ তার সেই চিন্তা মগ্নতায় ছেদ ঘটাল। সে বার কয়েক তার চোখ পিটপিট করেই তার সোনালী চোখ দুটো স্থির করে দিল এটা বুঝতে পেরে যে দরজার বাইরে যে রয়েছে সে তয়া। কিউ সোজা দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে রইল এবং তখনই দরজাটা কোন আমন্ত্রণ ছাড়াই তার সামনে খুলে গেল।
তয়া সোজা ভিতরে চলে এসে দেখল সে যার উদ্দেশ্যে এসেছে সে ভিতরেই রয়েছে এবং একটা সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে। "কিওকোর ব্যাপার-স্যাপারটা কী বলো দেখি?" সে সরাসরি কাজের কথায় চলে এল।
কিউয়ের চোখ দুটো তয়ার উপর যেন বাণের মতো বিদ্ধ হল, কিন্তু তার মুখে তয়ার প্রশ্নের প্রতি কোন আগ্রহের ছাপ তৈরি হল না।
কিউয়ের মেজাজ তয়ার থেকে ভাল আর কেউ জানত না, এবং সে জানত যে কোন বিষয় যদি তার মনকে ধাক্কা না দেয় তাহলে সে তার দিকে তাকাবেও না। কিউয়ের মন পড়া তার কাছে একাট বিজ্ঞানের মতো। কিউ যদি একবার চোখের পলকও ফেলে তাহলেও তাতে কিছু না কিছু নিহিত থাকে। তয়া কিউয়ের উল্টোদিকে একটা গদিমোড়া চেয়ারে গিয়ে বসল।
“শোন, আমি কিন্তু নির্বোধ নই। তুমি যদি চাও আমি ওকে রক্ষা করি, তাহলে আমি কেন তা করব তা কিন্তু আমাকে বলতে হবে। হাজার হোক, এখানে বাকি সবাই নিজের-নিজের মতো থাকব, তাহলে ও-ই বা আলাদা কিছু হবে কেন?" সে তারা হাত ঝটকালো এটা বোঝানোর জন্য যে ব্যাপারটা তার কাছে বেশ বিরক্তিকর। “ও তো একটা দুর্বল মানব কন্যা মাত্র।”
তয়া কিউয়ের নখর হাতটা চেপে ধরল এবং হঠাৎ করেই দেখল সেটা তার গলায় উঠে এসেছে, এবং সঙ্গে সঙ্গে তার চোখ দুটো কিউয়ের ক্রুদ্ধ চোখের উপর পড়ল।
“আমি যা বলব তোমাকে তা-ই করতে হবে,” কিউয়ের গলা রাগে কাঁপছিল।
তয়ার চোখ ছোট হয়ে এল। সে জানত কিছু একটা হয়েছে। “বেশ।” সে কর্কশ কণ্ঠে বলল, এবং তার পুরস্কারস্বরূপ কিউয়ের হাত তার গলা থেকে নেমে গেল। সে দেখল মুহূর্তের মধ্যে কিউয়ের ক্ষিপ্ততা যেন জল হয়ে গেল এবং সে তার আগের জায়গায় গিয়ে বসে পড়ল, তার মুখের উপর শান্ত স্বভাবের মুখোশটা নেমে এলো যেন। তয়া মাথা নাড়ল। "ও কেন ‘তোমার’ কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তোমাকে বলতেই হবে।" তোমার শব্দটায় তয়া বেশ জোর দিল।
কিউ তাতে কিছুটা একমত হল বলে মনে হল। সে তয়াকে তার জন্মের সময় থেকেই মানুষ করে এসেছে। সে জানত তার ভাই তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার মুহূর্তেই তার খুব কাছেই ছিল এবং সে তাকে সেই বাবা-মার থেকে চুরি করে নিয়ে চলে গেছিল যারা হয়ত তয়াকে ঠিকঠাক মতো মানুষ করতে পারত না। তার অন্যান্য ভাইবোনেদের ক্ষেত্রেও একই জিনিস ঘটেছিল, যদিও কিছু সময়ের পর থেকে কিউ দূর থেকেই তাদের দেখাশোনা করত।
কিউয়ের আশা ছিল সে তয়ার ব্যক্তিত্বকে কিছুটা অন্যরকমভাবে গড়ে দিতে পারবে, কিন্তু মনে হচ্ছিল যেন তা আর সম্ভব নয়, বাকি জীবনটা সে হয়ত একইভাবে থেকে যাবে কিউ যতই চেষ্টা করুক না কেন তাকে বদলাবার। মোদ্দা কথা হল তয়া আসলে তয়াই হয়ে থেকে গেছে, জীবন যে দিকেই যাক না কেন। এটা হতেও পারে যে কিউকোর সঙ্গে দেখা হবার পর থেকে অতীতের চিন্তা তাকে কিছুটা প্ররোচিত করছে, কিন্তু তার ভাইয়ের মধ্যে সে তেমন কিছুই এখনও দেখতে পাচ্ছে না। এই কথাটাই কিউয়ের চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ ফেলল।
"তোমার মধ্যে কি ওর জন্য কোন অনুভূতিই নেই?” কথাটা কিউ এমন একটা ভঙ্গিতে জিজ্ঞাসা করল যা তয়াকে কিছুটা সঙ্কুচিত করল।
"আমার সেরকম কিছু থাকার কথা কি?" তয়া প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল, এটা জেনেই যে, কিওকোর জন্য তার মনে কিছু তো রয়েইছে, কিন্তু তার স্বীকারোক্তি প্রকাশ না করেই। কিউয়ের দিকে তার হাত দুটো জড়ো করে সে তার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করে রইল, কিউয়ের সোনালি চোখের চাউনির ওপার থেকে কী উত্তর আসতে পারে তা না বুঝেই।
“হ্যাঁ,” শান্ত কণ্ঠে উত্তর এল।
“ধুত্তোর! ও আমাদের কাছে এতটা গুরুত্ব পাচ্ছে কেন?" হাত দুটোকে উপরে ছুঁড়ে দিয়ে তয়া তার বিরক্তি প্রকাশ করল।
কিউয়ের চোখের চাউনি তার বিরক্তিকে চ্যালেঞ্জ করল, “ও সে যার জন্য আমরা অপেক্ষা করে বসেছিলাম।”
তয়ার চোখ প্রসারিত হল। যতদূর অতীত সে মনে করতে পারে মনে করে দেখল, কিউ তাকে বলেছিল তাদেরকে সেই মানুষটার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকতে হবে যে রক্ষকের অন্তর-স্ফটিক তার অন্তরের মধ্যে নিয়ে চলে গেছে। সে নিঃসন্দেহে কিওকোকে বোঝাতে চায়নি... এত শক্তিশালী একটা স্ফটিক কীভাবে এতটা হীনবল একটা মেয়ের অন্তরে থাকতে পারে? আর সেই জন্যই তো সে কোন দুর্ধর্ষ যোদ্ধা জাতীয় কারো অপেক্ষায় বসেছিল... কোন সাদা-মাটা মেয়ের অপেক্ষায় নয়।
“তুমি কি ওই মেয়েটার জন্য এত লোকজন জড়ো করেছো?” চোখের ভ্রু তুলে সে কিউয়ের উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল।
কিউ বরাবর তার অতীত সম্পর্কে তয়াকে বলা থেকে বিরত থাকতে চেয়েছে, কিন্তু সে তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাকে সবসময়েই সতর্ক করে এসেছে। “তোমাকে যে কোন অবস্থায় ওকে রক্ষা করতেই হবে।”
তয়ার মনে চিন্তার ঘুর্ণবাত শুরু হয়ে গেল এবং গোটা ঘরটায় একটা নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেল। সম্প্রতি সে এই গোটা অঞ্চলটাতেই কিছু দানবীয় স্পন্দন অনুভব করছে, যেন নতুন নতুন দানবের জন্ম হচ্ছে এখানে, এবং অশুভ শক্তির প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
“বেশ, তাহলে ও-ই সেই। আমার আর কী কী জানা দরকার?" এতক্ষণে তাকে কিছুটা স্বস্তি পেতে দেখা গেল এটা জেনে যে কেন তার ভাই কিওকোর ব্যাপারে এতটা আগ্রহ দেখাচ্ছে, কিন্তু এই মুহূর্তে সে সেই সব অনুভূতিগুলোর গভীরে যেতে চাইল না যেগুলো ঈর্ষার ইঙ্গিতবহ।
কিউ এতকাল ধরে সত্যিটা লুকিয়ে রেখে আসছিল, সে যে সত্যিটা তাকে জানাবে সে ব্যাপারে তয়া নিশ্চিত ছিল না। অতীতে কিওকো যে তয়ার খুব কাছাকাছি ছিল তাতে তেমন কোন সুবিধা হয়নি। কিছু জিনিস বোধহয় ভুলে যাওয়াই ভাল। এরা দু’জনে সময় থেকে অবিচ্ছিন্ন। “ওকে রক্ষা করার জন্যই তোমার পুনর্জন্ম হয়েছে, আর আমি ওর অপেক্ষায় এক হাজার বছর থেকে বেঁচে আছি। এখনকার মতো... তোমার এটুকু জানলেই চলবে।"
তয়া শ্বাস টেনে একটা হিস করে শব্দ করে তারপর দুষ্টুমিমাখা হাসি হাসল। “আমার ব্যস এটুকুই জানা দরকার, তাই না?” সে তার তীব্র রাগ প্রকাশ করে নিজের লম্বা-লম্বা চুলে হাত চালিয়ে দিল, হয়ত মাথাটা একটু ঠাণ্ডা করতে চাইল। “সেই জন্যই কি ওর দিকে দেখার সময় তোমার চোখে একটা জ্বলন্ত দৃষ্টি থাকে? তুমি বলেছো আমরা ঘনিষ্ঠ ছিলাম... তুমি কি আসলে সেই মেয়েটির ব্যাপারে বহুকাল আগে ঘটে যাওয়া এমন কোন কিছু নিয়ে ঈর্ষাণ্বিত যে তোমার দিকে আড়চোখেও তাকাবে না?” তয়ার চোখ জ্বলে উঠল... ওর চোখ দুটো এখন যেন গলিত রূপো।
কিউ তয়ার এই অনুমান শক্তি দেখে ফুঁসছিল। এমন একটা সময় ছিল যখন এই ছেলেটার রহস্যজনক অবধারণ ক্ষমতা ছিল।
“আমার ধৈর্য্যের সীমারেখা লঙ্ঘন করো না তয়া। স্ফটিক ফিরে পাই বা না পাই আমি তোমার অভিযোগ বা পাগলের প্রলাপ কিন্তু সহ্য করে যেতে পারব না, বিশেষ করে যদি তা ঋত্বিকাকে নিয়ে হয়। তোমাকে তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে... তুমি তা করতে পছন্দ করছো না করছো না তাতে আমার কিছু এসে যায় না। তোমার বদমেজাজকে কাবু করতে হবে এবং তার সামনে থাকাকালীন তোমাকে তোমাকে কোনরকম অনুমান করা থেকে দূরে থাকতে হবে। বুঝতে পারলে?” এই কথাগুলো বলতে বলতে সে তার ছোট ভাইয়ের দিকে আগুন-ঝরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।
কিউয়ের কথায় যেন তুষার-শলাকা তৈরি হয়েছিল, এবং তয়া এখনকার মতো তাদের কথাবার্তা শেষ হয়েছে বলে ধরে নিয়েছিল। তয়া তার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল এবং একবারও পিছনে বা অন্য কোন দিকে না দেখে সোজা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। দাদার কমরা থেকে বেরিয়ে সে একটু থমকে দাঁড়াল, কিওকোর ঘরের দরজার দিকে মুখ করে। সে ঘরটার মধ্যে কিওকোর উপস্থিতি অনুভব করতে পারলছিল।
সে দরজায় টোকা দেবার জন্য তার হাত তুলেছিল তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কাটানোর জন্য, কিন্তু তা কেন সে চাইছে তার কোন কারণ সেই মুহূর্তে তার জানা ছিল না। সে দ্রুত তার হাতটা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নিল এবং ঘুরে গিয়ে হলের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে শুরু করে দিল।
ওই হলঘরে যদি আর কেউ থাকত তাহলে সে তয়ার দু’পাশ দিয়ে চকচকে আবছা দুটো রূপালী রংয়ের ডানা দেখতে পেত যা তার হাঁটা শুরু করার সাথে সাথে ধীরে-ধীরে অদৃশ্য হয়ে যেতে থাকল।
Конец ознакомительного фрагмента.
Текст предоставлен ООО «ЛитРес».
Прочитайте эту книгу целиком, купив полную легальную версию на ЛитРес.
Безопасно оплатить книгу можно банковской картой Visa, MasterCard, Maestro, со счета мобильного телефона, с платежного терминала, в салоне МТС или Связной, через PayPal, WebMoney, Яндекс.Деньги, QIWI Кошелек, бонусными картами или другим удобным Вам способом.